ন্যান্সি স্বকীয় একজন

Rate this item
(0 votes)
সংখ্যার হিসেব কষলে তার গানের সংখ্যা খুব বেশি নয়, কিন্তু জনপ্রিয়তার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন তিনি। বেশকিছু চলচ্চিত্রে গান করে ইতিমধ্যেই শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছেন। স্বকীয় গায়কী দিয়ে অর্জন করে নিয়েছেন অসংখ্য ভক্তের অফুরান ভালোবাসা। তিনি নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি।

মূলত আধুনিক গান করলেও নজরুলগীতির প্রতি রয়েছে তার বিশেষ আগ্রহ। গান যেন জীবনেরই অংশ, গান যেন জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে দিয়ে যায় মধুরতম কোনো স্বপ্নীল ভালোবাসা। বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে শত প্রতিকূলতার মাঝে গানই যেন স্বপ্ন যোগায়, শক্তি দেয় আগামীর পথে হেঁটে যেতে-ন্যান্সির কাছে গান এমনিভাবে আসে কিংবা এমনিভাবে ধরা দেয়।

ছোট্টটি থাকাকালে মায়ের কণ্ঠের গানই প্রথম অনুপ্রাণিত করেছিল তাকে। মায়ের হারমোনিয়ামটাই ছিল তার খেলার সঙ্গী। বাবার কর্মসূত্রে ফরিদপুরের আলকাডাঙ্গা থাকাকালীন ন্যান্সি প্রথম সংগীতে তালিম নেন ওস্তাদ তারাপদ দাসের কাছে।

পরবর্তীতে বাবার বদলির সুবাদে ন্যান্সি নেত্রকোনায় এসে সম্পৃক্ত হন শিল্প একাডেমী ও শিল্পকলা একাডেমী সংগীতশিক্ষা কার্যক্রমে। সেসময় উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম নেন ওস্তাদ গোপাল দত্ত আর নজরুলগীতিতে তালিম নেন সুজন তোফাদারের কাছে। এই সময়টায় ন্যান্সির অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে নানা ধরনের সংগীত প্রতিযোগিতা আর অনুষ্ঠানে।

২০০০ সালে জাতীয় শিক্ষাসপ্তাহের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় নজরুলগীতি বিভাগে সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। এরপর ঢাকায় ওস্তাদ জাকির হোসেনের তত্ত্বাবধানে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘হিন্দোল’-এ নজরুলসংগীত বিভাগে ভর্তি হন। একদিকে সংগীতচর্চা আর অন্যদিকে বেতার-টিভিতে ডাক পড়তে থাকে তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে।

মজার বিষয় হলো, একসময়ে ন্যান্সি নাচও শিখেছিলেন বেশ কিছুদিন। তবে আজকের ন্যান্সি হয়ে ওঠার পেছনে বিশেষ একটি গল্প আছে। নেত্রকোনায় থাকাকালীন ন্যান্সির বাসায় এক সন্ধ্যায় ঘরোয়া গানের আসরে তার মামা নজরুল ইসলামের সাথে আসেন খ্যাতনামা শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ। সেদিন ন্যান্সির গান শুনে বেশ প্রীত হয়েছিলেন তিনি।

বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদের মুখে ন্যান্সির কণ্ঠের স্বকীয়তা ও মাধুর্যের কথা শুনে ছেলে হাবিব ওয়াহিদ ন্যান্সিকে ডেকে আনেন তার স্টুডিওতে। যদিও প্রথমে ‘ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু’ শিরোনামের গানটিতে হামিং-এর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছিল ন্যান্সিকে। এর কিছুদিন পর আবারও ডাক পড়লো ন্যান্সির হাবিবের স্টুডিও থেকে।

কণ্ঠ দিলেন ফ্রেশ সয়াবিন তেলের টিভিসির জিঙ্গেলে। এরপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জনপ্রিয় অনেক বিজ্ঞাপনচিত্র, টিভিনাটক আর চলচ্চিত্রে প্লেব্ল্যাক করে ন্যান্সি শ্রোতাদের মনে স্থান করে নেয়। গেল বছর মুক্তি পাওয়া ‘থার্ডপারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ চলচ্চিত্রের ‘দ্বিধা’ গানটি আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এনে দেয় এই শিল্পীকে।

এর কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছিল ন্যান্সির প্রথম একক অ্যালবাম ‘অধরা ভালোবাসা’। তবে ন্যান্সি যে ধারারই গান করুন না কেন, নজরুলসংগীতের প্রতি তার আলাদা এক-ধরনের ভালোবাসা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নজরুলগীতি আমার কাছে অশেষ ভালোলাগার। ইচ্ছে তো করে নজরুলগীতির একটি একক অ্যালবাম করি কিন্তু সাধ্য নেই।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমার খুববেশি হৃদ্যতা নেই, যে কারণে এ ধরনের অ্যালবাম করা হচ্ছে না। তবে যদি করতে পারতাম আমার স্বপ্ন পূরণ হতো।’
0 awesome comments!
Scroll to Top