0 awesome comments!
মৌসুমী এখনো মাঠে
মৌসুমী। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ২০ বছর পার করেছেন। চলচ্চিত্র নিয়ে তাঁর ভাবনা কী? কীভাবে এগিয়ে যেতে চান সামনে?
বাহরাইনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ওই দিনই দেশে ফিরেছেন মৌসুমী। সন্ধ্যা। শীতের চাদর জড়িয়েছে শহরটি তখন। শহরজুড়ে বাস, ট্রাক, রিকশা, বাসার ছাদে, রাস্তার দুই ধারে বিজয় আনন্দের লাল-সবুজ পতাকা পতপত করে উড়ছে। মৌসুমীর বসার ঘরে বসেও আমাদের মনে তখন বিজয়ের আনন্দ।
৩০ মিনিট বাদে এসে ঢুকলেন। ঘুমঘুম চোখ। মুখে স্নিগ্ধ হাসি ছড়িয়ে দিয়ে ঘুমকে ছুটি দিলেন।
বললেন, ‘বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই দেখলাম, সবখানে লাল-সবুজের পতাকা। নয় মাসের যুদ্ধে যে রক্ত ঝরেছে, সেই বেদনা থেকেই বিজয়ের আনন্দ। “বিজয় নিশান উড়ছে ঐ...”—গানটির কী আবেদন! আমার ছেলে ফারদিন পতাকা কিনে ছাদে উড়িয়েছে। এই চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার তাগিদ দিচ্ছে।’
তাঁর কথায় সায় দিই, কিন্তু যোগ করি, পথে পথে যে এত বাধা...
‘আমি হতাশ নই। একদিন না একদিন সব ঠিক হবেই।’ বললেন তিনি।
দেশের কথা, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের কথা মনে হলেও বুকের মধ্যে কেমন এক হাহাকার বাসা বাঁধে। আবেগে ছেয়ে যায় মন। চলচ্চিত্রের মৌসুমীও সেই আবেগকে মনেপ্রাণে ধারণ করেন। কিন্তু আজ এই রেশ কাটিয়ে চলচ্চিত্রে ২০ বছর পার করে আসা পরের মৌসুমীর কাছে ফিরতে হবে। তাঁর ২০ বছরের অর্জন থেকে আগামী দিনের ভাবনা—মূল আড্ডা এখানেই।
এ গল্পে ঢুকব ঢুকব, অমনি মৌসুমীর দুই সন্তান ফারদিন আর ফাইজা এসে মায়ের কাছে বসে পড়ল। দুজনকে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরেছেন মৌসুমী, চলছে কথোপকথন। বিজয়ের আবেগের সঙ্গে সন্তানের প্রতি ভালোবাসার আবেগ মিলেমিশে যেন একাকার!
কেমন মা আপনি? প্রশ্ন করি।
‘মা হয়ে আমি গর্বিত। আমার মেয়ে ফাইজার কাছে আমি ১০ বছরের শিশু। ছেলে ফারদিনের সঙ্গে আমি ১৫ বছর বয়সী বন্ধু। তাদের পড়ার সময়টুকু ছাড়া কোনো কাজেই বাধা দিই না। ফারদিন ফিল্ম নিয়ে কাজ করবে, পড়ার বাইরের সময়টুকু এসব নিয়েই থাকে ও। করছে করুক। মা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করলে সন্তান পথ হারাবে না।’
মূল গল্পে ফিরে আসার তাগিদ দিই আমরা। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেন তিনি।
সেই ১৯৯৩ সালে কেয়ামত থেকে কেয়ামত দিয়ে শুরু আর ২০১৩ শেষে এসে কিছু আশা কিছু ভালোবাসা মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ ছবি। মাঝে তাঁর অভিনয়ের ডালিতে ভরেছেন প্রায় ২০০ ছবি। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ স্বীকৃতির অভাব নেই। পেয়েছেন লাখো অনুরাগীর আশীর্বাদ। চলচ্চিত্রে এই ২০ বছরের অর্জনের গল্পের পথে আমরা যাব না। আমাদের প্রশ্ন—এই দীর্ঘ সময়ে অপ্রাপ্তির গল্প কী?
‘এই ২০ বছর ধরে কাজ করলাম, ব্যক্তিগতভাবে কী পেলাম, সেটা বড় ব্যাপার নয়। মূল্যায়নের অভাবে চলচ্চিত্রের অনেক তৈরি শিল্পীকে আমরা হারিয়ে ফেলছি। আমরা কি সঠিক কাজ পাচ্ছি? একজন শিল্পীর ভালো-মন্দ থাকবে, তাই বলে মন্দটাকে বারবার সামনে এনে শিল্পীকে এই জায়গায় নিরুৎসাহী করছি কেন? সবকিছুর পরও এখনো মাঠে আছি আমি।’
তাহলে আপনার না পাওয়ার গল্প তো এই সূত্রেই ধরতে পারি, নাকি? জানতে চাই আমরা।
‘পারেন হয়তো। না-পাওয়ার বেদনা খারাপ নয়। পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে টিকিয়ে রাখে। বিনোদিনী চরিত্রে অভিনয়ের আকাঙ্ক্ষা যেমন আজও রয়ে গেছে আমার।’
চলচ্চিত্রে ২০ বছর পেরিয়ে ২১-এর শুরুতে অভিনেত্রী মৌসুমীকে দর্শকেরা কীভাবে দেখবেন? ‘আমার বর্তমান অবস্থান থেকে গল্প, চরিত্র মিলে গেলে অভিনয় করছি। এর মধ্যে কাঁটা তার ও লিডার নামে দুটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।’
মেহের নিগার, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি চলচ্চিত্র থেকে সম্প্রতি শূন্য হূদয় নামের একটা টেলিমুভি পরিচালনা করলেন। এ পথে মৌসুমী নিয়মিত থাকবেন কি?
‘আমি চলচ্চিত্রের মানুষ। সময়ই বলে দেবে। আগামী বছর আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করব।’
প্রস্তুতি?
‘প্রস্তুতি ব্যাপার নয়। নিজের মানসিক সিদ্ধান্তই বড় ব্যাপার। জানতে হলে বই পড়া জরুরি। সুনীলের সেই সময় আমি বারবার পড়ি। অভিজ্ঞতা নিজের ভাবনাকে বিস্তৃত করে।’
ফাঁকে মুঠোফোনে কী যেন দেখছেন মৌসুমী আর মিটি মিটি হাসছেন। বোঝা গেল, মেসেজ চালাচালিও চলছে। বললেন, ফেসবুক নিয়ে তাঁর ভক্তদের অভিমান-অভিযোগের কথা। ‘বলুন তো, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট লিমিট শেষ। ইনবক্সে হাজার মেসেজ। কয়টার উত্তর দেব?’
এবার ফিরে আসি পরিবার প্রসঙ্গে। একান্ত সময়টায় পরিবার নিয়ে ভালো লাগার জায়গায় বেরিয়ে পড়েন মৌসুমী। নিজের ভালো লাগার জিনিসগুলো সন্তানদের কাছে মেলে ধরেন। বললেন, ‘সমুদ্রের বিশালতা আমাকে টানে, পাহাড়ের নীরবতা আমাকে ভাবায়। সময় পেলেই সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ছুটে যাই পাহাড়ঘেঁষা সমুদ্রের ধারে। জোছনা প্লাবন সুন্দর রাত আমাকে লেখার খোরাক জোগায়। ব্যস!’
এরপর? কাল ছবি তোলা হবে, সে কথা বলে ফিরে এলাম আমরা।
পাদটীকা: পাঠক, আপনি জানেন কি?
অভিনেত্রী মৌসুমী কবিতা লেখেন। আগামী বইমেলায় তাঁর লেখা একটা কবিতার বই বের হবে।
বাহরাইনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ওই দিনই দেশে ফিরেছেন মৌসুমী। সন্ধ্যা। শীতের চাদর জড়িয়েছে শহরটি তখন। শহরজুড়ে বাস, ট্রাক, রিকশা, বাসার ছাদে, রাস্তার দুই ধারে বিজয় আনন্দের লাল-সবুজ পতাকা পতপত করে উড়ছে। মৌসুমীর বসার ঘরে বসেও আমাদের মনে তখন বিজয়ের আনন্দ।
৩০ মিনিট বাদে এসে ঢুকলেন। ঘুমঘুম চোখ। মুখে স্নিগ্ধ হাসি ছড়িয়ে দিয়ে ঘুমকে ছুটি দিলেন।
বললেন, ‘বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই দেখলাম, সবখানে লাল-সবুজের পতাকা। নয় মাসের যুদ্ধে যে রক্ত ঝরেছে, সেই বেদনা থেকেই বিজয়ের আনন্দ। “বিজয় নিশান উড়ছে ঐ...”—গানটির কী আবেদন! আমার ছেলে ফারদিন পতাকা কিনে ছাদে উড়িয়েছে। এই চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার তাগিদ দিচ্ছে।’
তাঁর কথায় সায় দিই, কিন্তু যোগ করি, পথে পথে যে এত বাধা...
‘আমি হতাশ নই। একদিন না একদিন সব ঠিক হবেই।’ বললেন তিনি।
দেশের কথা, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের কথা মনে হলেও বুকের মধ্যে কেমন এক হাহাকার বাসা বাঁধে। আবেগে ছেয়ে যায় মন। চলচ্চিত্রের মৌসুমীও সেই আবেগকে মনেপ্রাণে ধারণ করেন। কিন্তু আজ এই রেশ কাটিয়ে চলচ্চিত্রে ২০ বছর পার করে আসা পরের মৌসুমীর কাছে ফিরতে হবে। তাঁর ২০ বছরের অর্জন থেকে আগামী দিনের ভাবনা—মূল আড্ডা এখানেই।
এ গল্পে ঢুকব ঢুকব, অমনি মৌসুমীর দুই সন্তান ফারদিন আর ফাইজা এসে মায়ের কাছে বসে পড়ল। দুজনকে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরেছেন মৌসুমী, চলছে কথোপকথন। বিজয়ের আবেগের সঙ্গে সন্তানের প্রতি ভালোবাসার আবেগ মিলেমিশে যেন একাকার!
কেমন মা আপনি? প্রশ্ন করি।
‘মা হয়ে আমি গর্বিত। আমার মেয়ে ফাইজার কাছে আমি ১০ বছরের শিশু। ছেলে ফারদিনের সঙ্গে আমি ১৫ বছর বয়সী বন্ধু। তাদের পড়ার সময়টুকু ছাড়া কোনো কাজেই বাধা দিই না। ফারদিন ফিল্ম নিয়ে কাজ করবে, পড়ার বাইরের সময়টুকু এসব নিয়েই থাকে ও। করছে করুক। মা হিসেবে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করলে সন্তান পথ হারাবে না।’
মূল গল্পে ফিরে আসার তাগিদ দিই আমরা। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেন তিনি।
সেই ১৯৯৩ সালে কেয়ামত থেকে কেয়ামত দিয়ে শুরু আর ২০১৩ শেষে এসে কিছু আশা কিছু ভালোবাসা মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ ছবি। মাঝে তাঁর অভিনয়ের ডালিতে ভরেছেন প্রায় ২০০ ছবি। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ স্বীকৃতির অভাব নেই। পেয়েছেন লাখো অনুরাগীর আশীর্বাদ। চলচ্চিত্রে এই ২০ বছরের অর্জনের গল্পের পথে আমরা যাব না। আমাদের প্রশ্ন—এই দীর্ঘ সময়ে অপ্রাপ্তির গল্প কী?
‘এই ২০ বছর ধরে কাজ করলাম, ব্যক্তিগতভাবে কী পেলাম, সেটা বড় ব্যাপার নয়। মূল্যায়নের অভাবে চলচ্চিত্রের অনেক তৈরি শিল্পীকে আমরা হারিয়ে ফেলছি। আমরা কি সঠিক কাজ পাচ্ছি? একজন শিল্পীর ভালো-মন্দ থাকবে, তাই বলে মন্দটাকে বারবার সামনে এনে শিল্পীকে এই জায়গায় নিরুৎসাহী করছি কেন? সবকিছুর পরও এখনো মাঠে আছি আমি।’
তাহলে আপনার না পাওয়ার গল্প তো এই সূত্রেই ধরতে পারি, নাকি? জানতে চাই আমরা।
‘পারেন হয়তো। না-পাওয়ার বেদনা খারাপ নয়। পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে টিকিয়ে রাখে। বিনোদিনী চরিত্রে অভিনয়ের আকাঙ্ক্ষা যেমন আজও রয়ে গেছে আমার।’
চলচ্চিত্রে ২০ বছর পেরিয়ে ২১-এর শুরুতে অভিনেত্রী মৌসুমীকে দর্শকেরা কীভাবে দেখবেন? ‘আমার বর্তমান অবস্থান থেকে গল্প, চরিত্র মিলে গেলে অভিনয় করছি। এর মধ্যে কাঁটা তার ও লিডার নামে দুটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।’
মেহের নিগার, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি চলচ্চিত্র থেকে সম্প্রতি শূন্য হূদয় নামের একটা টেলিমুভি পরিচালনা করলেন। এ পথে মৌসুমী নিয়মিত থাকবেন কি?
‘আমি চলচ্চিত্রের মানুষ। সময়ই বলে দেবে। আগামী বছর আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করব।’
প্রস্তুতি?
‘প্রস্তুতি ব্যাপার নয়। নিজের মানসিক সিদ্ধান্তই বড় ব্যাপার। জানতে হলে বই পড়া জরুরি। সুনীলের সেই সময় আমি বারবার পড়ি। অভিজ্ঞতা নিজের ভাবনাকে বিস্তৃত করে।’
ফাঁকে মুঠোফোনে কী যেন দেখছেন মৌসুমী আর মিটি মিটি হাসছেন। বোঝা গেল, মেসেজ চালাচালিও চলছে। বললেন, ফেসবুক নিয়ে তাঁর ভক্তদের অভিমান-অভিযোগের কথা। ‘বলুন তো, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট লিমিট শেষ। ইনবক্সে হাজার মেসেজ। কয়টার উত্তর দেব?’
এবার ফিরে আসি পরিবার প্রসঙ্গে। একান্ত সময়টায় পরিবার নিয়ে ভালো লাগার জায়গায় বেরিয়ে পড়েন মৌসুমী। নিজের ভালো লাগার জিনিসগুলো সন্তানদের কাছে মেলে ধরেন। বললেন, ‘সমুদ্রের বিশালতা আমাকে টানে, পাহাড়ের নীরবতা আমাকে ভাবায়। সময় পেলেই সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ছুটে যাই পাহাড়ঘেঁষা সমুদ্রের ধারে। জোছনা প্লাবন সুন্দর রাত আমাকে লেখার খোরাক জোগায়। ব্যস!’
এরপর? কাল ছবি তোলা হবে, সে কথা বলে ফিরে এলাম আমরা।
পাদটীকা: পাঠক, আপনি জানেন কি?
অভিনেত্রী মৌসুমী কবিতা লেখেন। আগামী বইমেলায় তাঁর লেখা একটা কবিতার বই বের হবে।
Published in
Banglatainment