যেখানে আমার গাড়ি সেখানেই আমাদের বাড়ি
টানা চার বছর পলা কর্ব ও তার দুই মেয়ের জীবন আটকে ছিল একটি ২০০০ মাজদা মিনিভ্যানের ভেতরে আবদ্ধ। এই গাড়িটিই ছিল তাদের বাড়ি।
যুক্তরাষ্ট্রের দু’লাখ ১৪ হাজার গৃহহীন মানুষের মতোই পলা এবং তার দুই মেয়ে অ্যালিস ও এমিলির মাথার ওপর কোন ছাদ নেই। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশটির গৃহহীন এসব মানুষেরা সেসব জায়গায় ঙংসভড যেটা ঘুমানোর জায়গা নয়। বাস স্টেশন, পরিত্যাক্ত বাড়ি অথবা পাকিং এরিয়া-যেখানে যখন সুযোগ পাওয়া যায়। এদেরমধ্যে অন্তত ১০ হাজার মানুষের বাড়িঘর তার গাড়ি।
২০ বছর পলা কর্ব ও তার সাবেক প্রকৌশলী স্বামী এবং তাদের দুই মেয়ে নিয়ে সান্তা বারবারার কাছে চার বেডের একটি বাসায় থাকতেন। সে জীবনটা ছিল অনেকটা রুপকথার গল্পের মতো। কিন্তু বিচ্ছেদের ৮ বছর পর কর্ব প্রায় ভেঙ্গে পড়ে। বাড়ি বিক্রির টাকা ঋণ শোধ ও আইনজীবীর পাওনা মেটাতেই প্রায় শেষ হয়ে যায়। একসময় সবকিছু নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন তার মিনিভ্যানে।
কর্বের ২২ বছর বয়সী মেয়ে অ্যালিস জানায়, ভ্যানের প্রথম দিনটা খুব আতঙ্কে কেটেছে। এটা ছিল খুবই হতাশাজনক।”
সে বলেন, “ আমি শুধু ভাবছিলাম, যা ঘটছে তা কি সত্যিই ঘটছে? একটা কথাই শুধু আমার মাথায় ঘুরতো: আমি বাড়ি যেতে চাইৃ। আমার যাওয়ার জন্য কোন বাড়ি নেই এটা আমি আমার মাথায় আসতে দিতাম না।”
পলা কর্ব মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ পেতেনে। তিনি তাদের জামাকাপড় পরিষ্কার করতে একটি চার্চে যেতেন। ভিড় এড়াতে রাত ৩টা থেকে তিনি কাজ শুরু করতেন।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী শহর সান্তা বারবারা। এখানে রাস্তায় গাড়িতে ঘুমানো নিষিদ্ধ। এরকম একটা শহরে “লুকায়িত গৃহহীন” মানুষের পক্ষে এরকম একটা শহরে টিকে থাকা খুবই কষ্টকর।
১৮ বছর বয়সী এমিলি কর্ব জানায়, প্রধান সমস্যা ছিল জায়গা। কোথায় ঘূুমাবো? জিনিসপত্র কোথায় রাখবো? বইগুলো কোথায় রাখলে নিরাপদ থাকবে? হাজারো সমস্যা। আরেকটা বড় সমস্যা ছিল বাথরুম।”
এক দশক আগে সান্তা বারবারায় এসব গৃহহীন মানুষের জন্য একটি সেফ পার্কিং নামে একটি প্রকল্প চালু হয়। যাতে গাড়ির ভেতরে বসবাসকারী লোকজন গির্জা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বেশ কিছু জায়গায় বিনামূল্যে রাতের বেলা গাড়ি পার্ক করতে পারে। পরবর্তীতে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান ফ্রান্সসিসকোসহ আরো কিছু এলাকায় এই প্রকল্প চালু হয়। চলতি বছর লস এঞ্জেলেসের একটি আদালত গাড়ি ঘুমানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। লস এঞ্জেলেসের হোমলেস সার্ভিসেস সোসাইটির হিসেবে, প্রায় ৪০ হাজার গৃহহীন মানুষ রয়েছে সেখানে। এদেরমধ্যে অন্তত ৮ হাজার মানুষ বাস করে গাড়িতে। কিন্তু এই প্রকল্প চালানো ঠিক নাকি বেঠিক তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কিন্তু পলা কর্বের জন্য সেফ পার্কিং প্রকল্প ছিল একটি আশীর্বাদ।
তার মেয়ে এলিস একটা সময় কবে বাড়ি যেতে পারবে এই চিন্তা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু সে সব সময়ই ভাবতো সকাল হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
হাইস্কলে পড়ার সময় রাস্তার বাতির আলোতে পড়াশুনা করতে হয়েছে এমিলি কর্বকে। স্কুলে ভাল ফলাফল করে সে কলেজে স্কলারশিপ জোগার করে নেয়। কিছুদিন হলো সে তার এক বন্ধুর বাড়িতে একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেছে। এখানকার জীবন তাকে কিছুটা আরাম দিয়েছে। কিন্তু মা ও বোনের জন্য তার দুশ্চিন্তা কমে না। মাঝে মাঝে নিজেকে তার খানিকটা অপরাধী লাগে।