বিয়েতে নিকটাত্মীয়কে এড়িয়ে যাবেন যে কারণে
মানবসভ্যতার বিকাশ কিংবা প্রসারে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সৃষ্টির আদি থেকে মানব-মানবীর বিশেষ সম্পর্ককে গোষ্ঠীগত স্বীকৃতি দেওয়ার প্রথা চালু ছিল। কালের বিবর্তনে এই সম্পর্ক বিয়ে নামে পরিচিতি পেয়েছে। গুরত্বপূর্ণ এই সম্পর্ক গড়ার আগে আমরা অনেক বিষয় গুরত্বহীন মনে করি। যার পরিণাম ভয়াবহ হয়।
আমাদের সমাজে প্রায়ই নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। চাচাতো, মামাতো, খালাতো ও ফুফাতো ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ের পরিণামে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি। দ্য ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড শহরে বসবাসকারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সন্তানের জিনগত অস্বাভাবিকতার হার সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। এসব অস্বাভাবিকতার মধ্যে নবজাতকের অতিরিক্ত আঙুল গজানোর মতো সমস্যা থেকে শুরু করে হৃৎপি-ে ছিদ্র বা মস্তিষ্কের গঠন-প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিতে পারে। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এয়ামন শেরিডান। সাড়ে ১৩ হাজার শিশুকে ওই গবেষণার আওতায় আনা হয়। ব্র্যাডফোর্ড শহরে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের বড় একটি অংশ বসবাস করে। সেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৭ শতাংশই রক্ত-সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রক্ত-সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের প্রচলন রয়েছে। সারা বিশ্বে ১০০ কোটির বেশি মানুষ এ রকম সংস্কৃতি ধারণ করে।
শুধু আত্মীয়তার সম্পর্কই নয়, বিপদ এড়াতে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্ত পরীক্ষা করা নিয়েও সচেতন থাকা জরুরি। না হলে বিয়ের পর ঘটতে থাকে একের পর এক অঘটন। জন্ম নেয় শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু, বেড়ে যায় মৃত্যুর হার।
চিকিৎসাশাস্ত্র বলে, হেপাটাইটিস-বি একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। পাত্র বা পাত্রী যেকোনো একজনের দেহে এই ভাইরাস থাকলে অন্যজন আক্রান্ত হবে। অনাগত সন্তানকেও করবে সংক্রমিত। পৃথিবীর অন্যতম ঘাতক ব্যাধি এটি। ভাইরাসটি এমন বিপজ্জনক যে, প্রধানত তা লিভারকে আক্রমণ করে। লিভারের শতকরা ৮৯ ভাগ প্রদাহের কারণ হলো হেপাটাইটিস ভাইরাস। শুধু প্রদাহই নয়, এই ভাইরাসের আক্রমণে লিভারে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত মায়ের গর্ভজাত শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগে মারা যেতে পারে। তাই বিয়ের আগেই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত পাত্র-পাত্রীর হেপাটাইটিস-বি আছে কি না।
এছাড়া রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়বে এইডসের জীবাণু। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতিদিন ৮ হাজার ৫০০ শিশু ও তরুণ-তরুণী এইচআইভি সংক্রমিত হচ্ছে এবং ২ হাজার ৫০০ মহিলা এইডসের কারণে মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এই হার যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে পাত্র-পাত্রী সিফিলিসের জীবাণু বহন করছে কি না। ভিডিআরএল পরীক্ষায় সেটি ধরা পড়বে। সিফিলিসে আক্রান্ত বাবা-মায়ের সন্তান বিকলাঙ্গ, নষ্ট হতে পারে। রক্তের আরএইচ পজিটিভ পুরুষের সঙ্গে আরএইচ নেগেটিভ মহিলার বিয়ে হলে মৃত শিশুর জন্ম হয় অথবা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক রক্তশূন্যতায় শিশু মারা যায়। বিয়ের আগে থেকে পাত্র-পাত্রীর রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে তাদের রক্তের গ্র“প কোনটা। পাত্র-পাত্রী থ্যালসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে তাদের সন্তানও এ রোগে আক্রান্ত হবে।
বিয়ে এক-দুই দিনের কোনো ব্যাপার নয়। এটা আপনার পুরো জীবন প্রভাবিত করবে। সুতরাং সচেতন হতে হবে আপনাকেই। তাই হেলাফেলা না করে বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন ভেবেচিন্তে, সচেতনতার সঙ্গে।